 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    
আজকের শিশু-কিশোর আগামী দিনের কর্ণধার। আর শিশু-কিশোররা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে মাদকমুক্ত, মানবিক মন মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠলেই দেশ ও জাতির উন্নতি ও অগ্রগতি নিশ্চিত হবে। প্রকৃতপক্ষে তাদের এ বয়সটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ বয়সে শিশু-কিশোররা রঙিন স্বপ্ন দেখে এবং অতিকৌতূহলী হয়। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশের কারণে তারা অনেক সময় আশাভঙ্গের বেদনায় ব্যথিত হয়ে অপরাধ জগতের অন্ধকারে পতিত হয়। যার ফলে সমাজে প্রায়ই নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ঘটনা ঘটে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হয়। কিশোর অপরাধের ভয়াবহ পরিণতি উপলব্ধি করতে পারেন কেবল ভুক্তভোগী পিতা-মাতাই। তাই সমাজের দায়িত্ববান সবার উচিত কিশোর অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধে সচেষ্ট হওয়া ও কিশোর অপরাধীদের অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর দিকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যমী হওয়া এবং যথাযথভাবে বেড়ে ওঠার জন্য সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা। যদিও হতাশার বিশেষ দিক হলো এই কিশোর অপরাধীরা পাচ্ছে সমাজের বিভিন্ন কু-চক্রী মহলের আশ্রয়।
কিশোর অপরাধ এবং নারায়ণগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন এ কথা বলেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, এই কিশোররা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। পরিবারের দরিদ্রতা ও অর্থের প্রাচুর্যতা উভয়ই কিশোর অপরাধের জন্য দায়ী। দরিদ্রতার জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে না পারায় কিশোর-কিশোরীরা হতাশা ও মানবেতর জীবনযাপন করে। মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং হতাশা থেকে বাঁচার প্রয়াসে এসব কিশোর-কিশোরীরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে, যেসব কিশোর-কিশোরীরা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অর্থ পায় এবং তা ব্যয় করতে অভিভাবকের নিকট তেমন কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না। সেসব কিশোর-কিশোরীরা অর্থের প্রাচুর্য থেকে মাদকাসক্ত ও ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে লিপ্ত হয়। কিশোর অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধে শিশু-কিশোরদের জন্য সুষ্ঠু বিনোদন ও খেলাধুলার সুব্যবস্থা থাকা খুবই দরকার।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন আরো বলেন, কিশোররা অপরাধে জড়ানোর পেছনে একক কোনো কারণ নেই। এর পেছনে খারাপ সঙ্গ, পরিবারের অসচেতনতা, সঠিক পরিচর্যার অভাব, নৈতিক শিক্ষার ঘাটতি, মৌলিক চাহিদা পূরণ না হওয়া অন্যতম। কিশোর গ্যাং বলতে মূলত অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের এমন সংগঠিত দলদের বোঝায় যারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকে। কিশোর অপরাধের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে দারিদ্র্য, সামাজিক বৈষম্য, উপযুক্ত পারিবারিক তত্ত্বাবধানের অভাব, মাদকাসক্তি, খারাপ সঙ্গ, শিক্ষার অভাব এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তিনি আরো বলেন, মা-বাবা সন্তানকে সময় না দেয়া, সামাজিক অবক্ষয়, স্বল্প বয়সে স্মার্টফোনসহ উন্নত প্রযুক্তি উপকরণের নাগাল পাওয়া, সঙ্গদোষ ইত্যাদি এর জন্য দায়ী। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে কিশোর অপরাধের খবর আমরা পাচ্ছি। রাস্তাঘাটে ছিনতাই, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, বাধা দিলে রক্তারক্তি পর্যন্ত করছে কিশোর অপরাধীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা পদক্ষেপের পরও তাদের অপতৎপরতার লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। তবে প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কিশোর সন্ত্রাস নতুন একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিশোররা যেন অপরাধে জড়াতে না পারে এবং কেউ তাদের অসৎ কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। কিশোর অপরাধ নির্মূলে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পরিবারের। কারণ পরিবারই একটি শিশুর বেড়ে ওঠার প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান। পরিবার যদি তার সন্তানদের ব্যবহার ও আচরণ গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে, সন্তানের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কী কী দরকার যে অনুযায়ী তাদের লালনপালন করে তাহলে সেগুলো একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পুলিশ সুপার মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, শিশু-কিশোরদের জন্য খেলাধুলা, সুষ্ঠু বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। সুদৃঢ় পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শিশু-কিশোরদের সব ধরনের অপরাধ থেকে দূরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যে কোনো মূল্যেই কিশোর অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে হবে। একটি পরিবারের প্রবীণদের উচিত অপ্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা, নৈতিকতা শেখানো এবং তাদের ওপর নজর রাখা। স্কুল কারিকুলামের বাইরে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট করা এবং যুক্ত করার সুযোগ বাড়াতে হবে। কিশোর অপরাধ রুখতে ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ইতোমধ্যে অপরাধ চক্রে জড়িয়ে গেছে, তাদের সুপথে নিয়ে আসতে উপযুক্ত কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন বলেন, কিশোর অপরাধের উত্থান প্রতিরোধ করা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ নয়, এটি একটি সামগ্রিক সামাজিক দায়িত্ব। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সমন্বিত উদ্যোগে কিশোরদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব। তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারলেই সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যাবে। এখনই সময় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার। মা-বাবা যদি তার সন্তান সারাদিন কোথায় ছিল, কার কার সঙ্গে ছিল, কার সঙ্গে মেলামেশা করে এগুলো যদি মা-বাবা সবসময় খেয়াল রাখেন তাহলে পরিবারের সন্তান বিপদে যেতে পারে না, কোনো সন্তান অপরাধ করতে পারে না। পরিবারের সন্তান ভালো ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে শুধু পরিবারে শান্তি বিরাজ করে না, এলাকায়ও শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করে। তখন তারা দেশের সম্পদে পরিণত হয়। তাই এলাকায় কিশোর অপরাধমুক্ত করতে পরিবার ও সমাজের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যেখানে অপরাধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সে বিষয়গুলো সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বর্তমান শিশু-কিশোরদের নিরপরাধী ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই, আগামীর নারায়ণগঞ্জ হবে সুখী সমৃদ্ধিপূর্ণ স্বপ্নের শান্তিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ । কিশোর অপরাধী বা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে কিশোর অপরাধ দমনে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য নারায়ণগঞ্জবাসীকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন।
Leave a Reply